শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

দস্তারবন্দী: এক আত্মতৃপ্তির মহাসম্মিলন

amarsurma.com

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
‘দস্তারবন্দী’ শব্দটা যেহেতু ইসলামি পরিভাষায় বহুল প্রচারিত ও প্রচলিত, ধর্মীয় শিক্ষার সাথে শব্দটি প্রাণসত্ত্বাগত ও ওৎপ্রোতভাবে জড়িত; সেহেতু বিশ্বের যে কোন স্থানের কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একে দস্তারবন্দী শব্দ হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন। দস্তারবন্দী শব্দটি ফারসি, যার অর্থ হচ্ছে ‘দ্বীনি মাদরাসার ফারিগদের সম্মান স্বরূপ পাগড়ি দেয়া। বিশেষ করে হাফেয ও তাকমীলে হাদিস-এর ছাত্রদের এই সম্মানে ভূষিত করা হয়’। (সূত্র: ফরহাঙ্গে জাদীদ) ‘শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ছাত্রের মাথায় পাগড়ি বাঁধার অনুষ্ঠান’। (সূত্র: ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমি) যদিও বাংলায় তার প্রতিশব্দ ‘সমাবর্তন’। এর অনেক অর্থ রয়েছে। তবে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য অর্থটি হল ‘¯œাতক ছাত্রগণকে উপাধি বিতরণের সভা। (সূত্র: সংসদ বাঙালা অভিধান) ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Convocation’।
ওহি ভিত্তিক কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার সিলেবাস অনুযায়ি প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লাখ লাখ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্য থেকে প্রতিবছর শত শত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সমাপনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আয়োজন করে থাকে দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনের। কোথাও কুরআন ভিত্তিক (তাহফিযুল কুরআনুল কারিম), আবার কোথাও হাদিস ভিত্তিক (তাকমিল ফিল হাদিস)। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৫ বছর, ১০ বছর করে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৫০ কিংবা শতবছরেও আয়োজন করে দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনের। আর তখনি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর সমাপনকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় দস্তারে ফযিলত তথা পাগড়ি। যদিও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাদের গ্র্যাজুয়েটদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদও দিয়ে থাকে।
২০১৯ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনব্যাপি দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনের। সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রেঙ্গা নামক স্থানে অবস্থিত দারুল উলূম দেওবন্দের অনুসারি ও বৃহত্তর সিলেটের প্রাচীনতম শিক্ষা বোর্ড ‘আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ’-এর তালিকাভূক্ত মাদানী নেসাবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সিলেট’-এর শত বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বিরাট আয়োজন প্রায় শেষপ্রান্তে। শতবার্ষিক দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই জামেয়ার সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী পার করছেন ব্যস্ত সময়। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠান থেকে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। সর্বত্র বিরাজ করছে খুশির আমেজ। দেশে-প্রবাসে অবস্থানরত সকল ¯œাতকোত্তরধারীরা কাজ করছেন বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে।
দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রায় দুইবছর আগ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে বিশ্বের সেরা ইসলামি স্কলারগণকে এই মহাসম্মিলনে একত্রিত করা, তিন ভাষায় প্রায় হাজার খানেক পৃষ্ঠার একটি মনোরম স্মারক প্রকাশ উল্লেখযোগ্য। সম্মেলন সফল ও স্বার্থক করতে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের মধ্যে গণসংযোগ ও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ধরণের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই এত বড় একটি আয়োজন; সত্যিই ভাবিয়ে তুলে।
২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯; বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনব্যাপি দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনে বিশ্বের নামী-দামি ও সেরা ইসলামি স্কলারগণ অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া সমাবর্তনে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের ফল স্বরূপ ‘পাগড়ি’ গ্রহণের জন্য প্রবাসি গ্র্যাজুয়েটবৃন্দরা ইতিমধ্যেই দেশের পথে পা বাড়িয়েছেন। আর দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবনা ও ফুযালাগণও প্রস্তুত তাদের প্রিয় জামেয়ার এই শতবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করতে।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, জামেয়ার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আবনা-ফুযালাসহ সকল স্তরের ধর্মপ্রাণ মানুষ দু’হাত উপরের দিকে উঠিয়ে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে আরজ করছেন, ‘হে আল্লাহ! জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শতবার্ষিক সম্মেলনকে কবুল কর, সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কাজ আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক দান কর। সকল প্রকার বাঁধা ও সমস্যা দূরিভূত কর। এর দ্বারা মানুষের ইহ-পরকালীন কামিয়াব দান কর। মুসলিম মিল্লাতের ঈমান-আকিদার সঠিক শিক্ষা প্রদান ও হেফাজতকারী এই সকল প্রতিষ্ঠান সমূহকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী রাখো। আমিন!
লেখক পরিচিতি: ফাযিল, তাহফিযুল কুরআন-১৯৯৭ ইংরেজি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com